Friday, January 30, 2009

বাঙালীর লজ্জাঃ দারিদ্র্যের তাড়নায় ভারত বর্ষের ৪৫% গণিকা সাপ্লাই হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে

৩০শে জানুয়ারি ২০০৯ বিকেল ৪টে কলকাতাঃ রাজ্যে নারীপাচারের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে উদ্বেগজনক ভাবে। অধিকাংশ নারী পাচারের দালালচক্র, কলকাতা মহানগরী এবং শহরতলীতে, রমরমিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাবসা। এটা যে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও আশঙ্কার,সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
দেহব্যবসার জন্য ৩৫টি শহরে যে সংখ্যক মেয়ে বিক্রি হয়, তার ৫০ শতাংশই হয় কলকাতা থেকে। আর যে সংখ্যক মেয়ে কেনা হয়, তার মধ্যে ৪৭.৪ শতাংশ কেনা হয় কলকাতা থেকে। নাবালিকা মেয়েদের পাচারের প্রায় ৪৫.৫ শতাংশই চলে কলকাতার মধ্যে দিয়ে।
কলকাতায় ২১টি যৌনপল্লী আছে। উত্তর কলকাতার সোনাগাছি,রামবাগান,দক্ষিন কলকাতার কালীঘাট,বউবাজারে হারকাটা গলি এলাকায় আমরা প্রায়শ দেখতে পাই ১৩ থেকে ১৫ বছরের মেয়েদের।যাদের বেশীর ভাগ বাংলা দেশী বা পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকা বঁনগা,বসিরহাট অঞ্চলের মেয়েরা।সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলিকে এড়িয়ে লোকালয়ের মধ্যে বাড়ি ভাড়া করে পাচারকারীরা । আর পাচারের অন্যতম প্রধান করিডর হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন। সব মিলিয়ে কলকাতা মহানগরি হয়ে উঠেছে নাবালিকাদের পাচারের কেন্দ্র।
দালালরা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলাদের, কিশোরী ও নাবালিকাদের ‘ট্যাপ’ করার কাজে লাগায়। মেটিয়াবুরুজ ও গার্ডেনরিচ এলাকায় এই ধরণের একটি ঘটনা নজরে এসেছে।
বন্দর থানা এলাকার সায়রা বিবির ১৫ বছরের মেয়ে মমতা পাড়ারই অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে উধাও হয়ে যায়। খোঁজ খবর নিয়ে সায়রা বিবি জানতে পারেন, দুটি মেয়েকেই মুম্বাইয়ে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। পাচারকারী এলাকার পরিচিত মুখ। সায়রা বিবিদের বস্তিতে প্রায়ই তার আসা-যাওয়া ছিল। মেয়ের কথা জিঞ্জাসা করায় দালালরা উল্টে সায়রা বিবির উপরে চাপ দিতে শুরু করে। দালালরা তাকে বলে, “আরও চার পাঁচটা মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে পারলে তোমার মেয়ে কোথায় আছে জানাব। মেয়ে পিছু ১০ হাজার টাকা করেও দেব”।
রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও এরকম ঘটনা নজরে এসেছে।
এরকমই আরেকজন অভাগী রোখসানা। রোখসানা যখন তাঁর করুণ পরিণতির কথা জানাচ্ছিল তখন সে অঝোর ধারায় কাঁদছিল৷ ১৪ বছর বয়স্কা রোখসানা ‘খালার’ সঙ্গে দার্জিলিং-এর উত্তরে বসবাস করে৷
অন্যান্য সব বাচ্চাদের মত হাসি-খুশির পরিবেশে রোখসানার শৈশব কাটেনি৷ অনেক ছোট বয়স থেকেই তাঁকে পরিশ্রম করতে হয়েছে৷ রোখসানা জানালো, আমার খালা জানতেন যে আমি বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করতে চাইনি৷ খালা তাঁর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়েছেন কিন্তু আমাকে জোর করে বাড়ির যাবতীয় কাজ করান তিনি৷ আমারও ইচ্ছে করত স্কুলে যেতে৷ আমি সবসময়ই পড়াশোনা করতে চাইতাম৷

১২ বছর বয়সে রোখসানা পালিয়ে যায় এবং সীমান্ত পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে৷ তখন রোখসানাকে বলা হয় তাকে স্কুলে পাঠানো হবে, এমন জায়গায় তাকে রাখা হবে যেখানে তাকে নিজের মেয়ের মত দেখা হবে৷ বাস্তবে হয়েছে ঠিক এর উল্টো৷ রোখসানার ওপর শারীরীক এনং মানসিক নির্যাতন করা হয় প্রচন্ডভাবে৷ প্রায় ছয় মাস তার ওপর চলে এ ধরনের অত্যাচার৷ এরপর একটি সাহায্য সংস্হা রোখসানাকে উদ্ধার করে৷

বাদামী চোখের মেয়েদের কোলকাতার মত শহরে বেশ চাহিদা, দিল্লী মুম্বাই তো রয়েছেই৷ বিভিন্ন ধরনের চাকরির লোভ দেখিয়ে এসব মেয়েদের আটকে ফেলা হয়৷ এদের বিক্রি করা হয় ভারতের অসংখ্য পতিতালয়ে৷ এমনকি গৃহস্থালীর কাজের জন্য বিভিন্ন বাড়িতেও তাদের বিক্রি করা হয়৷ চালানো হয় অন্যায়- অত্যাচার৷

২০ বছর বয়স্কা এলা জানালো, ‘আমার মায়ের টাকা-পয়সার প্রতি তার ভীষণ লোভ৷ যে কারণে আমার জন্য সে কাজ খোঁজা শুরু করে৷ একদিন একটা লোক আমার মায়ের কাছে এসে বলে যে আমাকে এক বাড়িতে কাজ করতে হবে৷ এর পরিবর্তে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা আমাকে দেয়া হবে৷ আমরা মা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে রাজী হয় এবং আমাকে সেই লোকটির সাথে পাঠায়৷ আমি কিছুতেই যেতে চাইনি কিন্তু মা আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়৷’

তবে এলার জন্য কোন গৃহস্থালীর কাজ অপেক্ষা করছিল না অপেক্ষা করছিল পতিতালয়ের অমানবিক জীবন৷ আচমকা একদিন সেখানে পুলিশ হামলা চালায়৷ এলা ভাবছিল হয়তো তাদের রক্ষা করা হবে কিন্তু সে গুড়ে বালি৷
কি ঘটে ছিলো শুনুন এলার মুখথেকেই, ‘পুলিশ আমাদের সাহায্য করেনি৷ তারা আমাদের পতিতালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে৷ যদিও আমরা বার বার বলছিলাম যে আমরা বাড়ি যেতে চাই৷ পতিতালয়ে ফেরার পর আমাদের নতুন করে চুল কেটে দেয়া হয়, নতুন পোশাক দেয়া হয়’
দেহ ব্যবসায়ে কলকাতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। পশ্চিমবঙ্গ ও ভিন রাজ্য থেকে পাচার হয়ে আসা মেয়েদের এক বড় অংশই এখানে ঠাঁই পায়। তাছাড়া, কলকাতায় রয়েছে দেহ ব্যবসার অসংখ্য অস্থায়ী কেন্দ্র। সব মেয়ে যে ‘পাচার' হয়ে যৌনপল্লিতে ঠাঁই পাচ্ছে তা নয়। অনেকেই যৌনকর্মীর পেশা বেছে নিচ্ছেন আর্থ-সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে। অনেক ক্ষেত্রে পাচার হয়ে আসা মহিলারা তথাকথিত পুনর্বাসনের পরেও যৌনপল্লিতে ফিরে যাচ্ছেন। দারিদ্র তাদের ঠেলে দিচ্ছে পুরনো পেশায়। আর তারা নারী পাচার ঠেকাতে চাইলেও রেহাই পাচ্ছে না।
পাচার হওয়া নারী বা শিশু যদি ফিরে আসে - তাহলেও বিভিন্ন রকম সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা৷ কারণ, তখন তারা আর মানুষ নয়, পরিণত হয়েছে ভিক্টিমে !
এই নারী পাচার রোধে বিশ্বব্যাপী নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু, তারপরও এই আদম ব্যবসাকে ঠেকানো যায় নি৷ বরং বিশ্বায়ন এবং মুক্ত অর্থনীতির সংস্পর্শে এসে নারী পাচার পরেছে নতুন মুখোশ৷ পেয়েছে নতুন নাম৷
সাম্প্রতিকতম একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে নারী পাচার প্রধানত এশিয়ার গরিব দেশগুলিতেই হয়ে থাকে৷ ভারত-বাংলাদেশ তো বটেই থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কাম্বোডিয়াতেও নারী পাচারের ঘটনা নতুন নয়৷
লজ্জা হয়, যখন দেখি আমাদেরই দেশের মানুষরা সারা দুনিয়ায় নারী ও শিশুদের ওপর যৌন পীড়নে অংশ নিচ্ছে৷ ভ্যোগ্য পন্যে পরিনত হচ্ছে আমাদের নারীর আত্মসন্মান। হাজার হাজার মেয়েদের গণিকাবৃত্তির কাজে লাগানোর জন্য আমাদের দেশ থেকে পাচার করা
হচ্ছে নারী৷পাচার চলছে৷ চলছে পতিতাবৃত্তি, যৌন পর্যটন, বিভিন্ন বাধ্যতামূলক শ্রম৷ চলছে নারীদের রক্ষিতা, ক্রীতদাস বা যৌন ছায়াছবি বা পত্রপত্রিকায় নগ্ন মডেল হিসেবে ব্যবহারের ঘৃণ্য কাজ৷

Please visit vinnobasar sponsorer:

Taking care of your parents in Kolkata


No comments:

Post a Comment