Friday, March 6, 2009

সমাজ তন্ত্রের স্বপ্ন হারিয়ে বাম আদর্শ এখন প্রার্থীপদ লাভের সংগ্রামে বিপ্লবি....




ভাস্কর ব্যানার্জী, ৬ই মার্চ,২০০৯, কলকাতাঃ
প্রমোদ দাশগুপ্ত ভাগ্যবান কারন তাকে দেখতে হল না এই দিনটা। তবে জ্যোতি বাবু দেখলেন। কমিউনিষ্ট আদর্শে যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। যৌবনের লাভাস্রোত কে যিনি প্রভাহিত করে ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শোষন মুক্ত সর্বহারাদের রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নে। এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে কম আত্মত্যাগ করেননি তিনি। কিন্তু জীবনের সায়াহ্নে এসে তাকে দেখতে হল তারই দলের এমন এক ভাবিকাল, যারা ক্ষমতার লোভে আদর্শচ্যুতই হয়নি, নৃসংস ভাবে কুঠারাঘাত করে আদর্শের মূলে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একদল ক্ষমতা লোভি স্বার্থান্বেষী বাম নেতাদের চরিত্র। যারা এতদিন মহান বামফ্রন্টের ঐক্য, প্লরেতারিয়েতের সরকার, সমাজ তন্ত্রের গুনমুগদ্ধ কমরেড ছিলেন। নির্বাচনে টিকিট না পেতেই তারা হয়ে উঠলেন ঘোর কমিউনিষ্ট বিদ্বেষী, গনতন্ত্রের পুরোহিত।
সইফুদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে সিপিএমে, এই রকম হঠাৎ আদর্শ বিদ্বেষী হওয়ার সূচনা। প্রায় চল্লিশ বছর কমিউনিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসি সফি হঠাৎ বিদ্রোহ করেন। এক পার্টির শাসনে বিশ্বাসি’ দলে দাবি করলেন গনতন্ত্রের। হয়ে উঠলেন গনতন্ত্রের প্রেমিক। শেষে হাত মেলালেন ‘তথাকথিত’ চরম ডানপন্থি পার্টি তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে।
২০০৯ সালে বাম আদর্শের গ্রাফিক চিত্রটা আরও ভয়াবহ। আদর্শের পরোয়া না করে এক দল নেতা শুধু মাত্র পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার (যাকে এক সময় বামপন্থিরা বলতো শুয়োরের খোঁয়াড়) টিকিট না পেয়ে চলে গেলেন বিপরীত শিবিরে।
আবু সাহেব, যিনি আগের নির্বাচনেও ভোট চেয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠনের আদর্শ বিনিময় করে। টিকিট না পাওয়ায় তিনি হুঙ্কার ছাড়লেন-‘মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ রয়েছে আমার সাথে। বহু সংখ্যালঘু নেতা আমার সাথে যোগাযোগ রাখছেন’।
বৃহস্পতিবার (৫.৩.২০০৯) মমতার সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আবু আয়েশ মন্ডল। আবু এখন তার পুরনো দলকে ভয় দেখাচ্ছেন-‘অনেক গোপন তথ্য আছে আমার কাছে। সব ফাঁস করে দেব’।
সিপিএমের আবু আয়েশ মন্ডলের মতো দল ছাড়লেন ফরওয়ার্ড ব্লকের হিতেন বর্মন। তারও দুঃখের কারন লোকসভা ভোটে টিকিট না পাওয়া। কোচবিহারে এ বার হিতেন বর্মনের জায়গায় ফরওয়ার্ড ব্লক মনোনয়ন দিয়েছে নৃপেন রায় কে। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারেননি হিতেন বাবু। এখনও নতুন দলে যোগ দেওয়ার কথা হিতেন বাবু না বললেও রাজনৈতীক সন্যাস নেওয়ার কথা ঘোষনা করে দিয়েছেন, নেতাজীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ দলের এই নেতা।
আর.এস.পি নেতা জোয়াকিম বাকলাও ক্ষুব্ধ দল টিকিট না দেওয়ায়। আরএসপি সুত্রে খবর- প্রকাশ্যে জোয়াকিম তার ক্ষোভের কথা বললেও এখনও দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেননি।
এই নেতাদের আদর্শচ্যুত হওয়ার দৌড়ে বামফ্রন্টে এক মাত্র নিস্কলঙ্ক সিপিআই। কারন তাদের কোন নেতা বিদ্রোহ করেননি। আসলে তারা গতবারে জয়ী কোনও প্রার্থীকেই বঞ্চিত করেননি। যদি করতো তাহলে চিত্রটা কি হত তা বলা যায়না।
যারা এক সময়ের সিপিএমের ধ্বজাধারী ছিলেন সেই কমরেডরা গঠন করল নতুন দল পি ডি এস। যার নেতৃত্বে এলেন এক সময়ের দঃ২৪ পরগনা জেলার দোর্দ্যন্ড প্রতাপশালী নেতা সমীর পুততুন্ড সঙ্গে তার সহধর্মিনী সহকর্মী অনুরাধা পুততুন্ড এবং কাটোয়ার প্রাক্তন সাংসদ সইফুদ্দিন চৌধুরীর। সফি সমীর বাবুরা প্রথমটা শুরু করে ছিলেন সাড়া জাগিয়ে। কিন্ত তারা কেন সঙ্গে পেলেন না সিপিএম থেকে বের করে দেওয়া বা বেড়িয়ে আসা আবু আয়েশ মন্ডলদের।সিপিএমের বিকল্প সিপিএম বানাতে সফি বাবুরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।কেন তাদের গঠিত দলের এ রকম হাল সে নিয়ে সফি সমীর বাবুরা কখনও কি ময়না তদন্ত করে দেখেছেন???? সমাজ তন্ত্রের স্বপ্ন হারিয়ে বাম আদর্শ এখন প্রার্থীপদ লাভের সংগ্রামে বিপ্লবী।

1 comment:

  1. সইফুদ্দিন তৃণমূলের সাথে হাত মেলান নি। উনি তৃণমুলের সমালোচনা করেছেন। সফিদার সাথে আবু মন্ডলকে জড়ানো খুব ভুল।
    -বিপ্লব

    ReplyDelete