Monday, March 2, 2009

কেন এই রিসিশানঃ আমরা কি দায়ী নই......।

লেখকঃ মৃনাল মজুমদার
. ০১. গ্রোথ গ্রোথ গ্রোথ। কিন্তু বিপ চাইলেই কি বাড়ানো যায় ? শেয়ার হোল্ডার ভ্যালু না বাড়ালে কোন কোম্পানির স্ট্যাটাস থাকেনা। আর শেয়ার হোল্ডার ভ্যালু বাড়াতে গেলে সম্পদ বাড়ান দরকার, রিয়েলিটিতে সম্পদ বাড়াতে না পারলেও ব্যালেন্স সিটে কারচুপি করে বাড়ানো যায়। যেমন এনরন, সত্যম।
.
. ০২. কয়েক বছর পূর্বে সেনসেক্স ৩০০০ হাজার ছিলো। ধরে নি গত ৬ বছরে ভারতে ভিজি ৯% বিপ বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে সেনসেক্স ৫৪% বাড়া উচিৎ ছিল । যেহেতু শেয়ার মার্কেটে ফিউচার নিয়ে ট্রেডিং হয়। তাই সবসময় পরবর্তি ২ বছর (সত্যি বলতে ৬ মাস) পর কি হতে পারে স্পেকুলেট করে শেয়ার আর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কাজেই গত ৬ বছরে যদি সেনসেক্স দ্বিগুন হত, কোন প্রবলেম থাকতো না।

০৩. ব্যাঙ্ক আমাদের টাকা জমা রাখে। সেই টাকা ইনভেষ্ট করে, মানে কোন ব্যক্তি , কোম্পানি, সরকার বা অন্য ব্যাঙ্ককে ঋণ দেয়। কেঊ কেঊ শেয়ার মার্কেটে খাটায়।
০৪. ব্যাঙ্ক আসলে ঋণ দিতে না পারলে ওদের ব্যবসা চলে না। সব থেকে সহজ হল যদি ব্যাঙ্ক কোন সম্পত্তি বন্দক রেখে ঋণ দেয়, যেমন ফ্ল্যাট। এখন ফ্ল্যাটের একটা মূল্য আছে। সেই মূল্য একটা নির্দিষ্ট হারে বাড়ে, মিনিমাম যতটা বাড়ে ততটা মূল্য বৃদ্ধি হয়। কিছু দালাল আছে যারা রিয়াল এস্টেটের মার্কেট নির্ধারন করে। অনেক দিন ধরে সেই মূল্য বেড়ে গেছে। যেহেতু ব্যাঙ্ক দেখলো, মূল্য বাড়ছে তাই কোন সমস্যা নেই, ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে ধার দিতে।
০৫. এক সময় দেখা যায়, যে ঋণ গ্রহিতা টাকা শোধ করতে পারে না, তখন ব্যাঙ্ক সম্পত্তি দখল করে নেয়, বাজারে সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নেয়।।কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে দেখা গেলো, যে বিক্রি করলে ৫০% ও পাওয়া যায় না।
০৬. শেয়ারের যেমন মূল্যটার উপর ভরসা করে ব্যাঙ্ক ঋন দেয়।যদি শেয়ারের দাম কমে যায়, ঋণ থেকে যায়,ব্যাঙ্ক চাপ দেয়,কোম্পানি টাকা দিতে পারে না।
০৭. এক ব্যাঙ্ক সাময়িক অর্থনৈতীক সমস্যার সমাধান করতে অন্য ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেয়।
০৮. ব্যাঙ্ক এখন বুঝেছে, যে সব ব্যাঙ্কের হাল খারাপ,তাকে কেউ ঋণ দেয় না।
০৯. সাধারনত বেশির ভাগ কোম্পানির যা বুক ভ্যালু,তার ১০-৩০% ব্যাক্তিগত মূলধন।বাকি টাকা ধার করা।যা ব্যাঙ্ক থেকে বা অন্য ভাবে।
১০.তা হলে দেখা গেলো, যে টাকা রোলিং হয়,তার ৭০%-৯০%অন্যের টাকা। এখন কোন কোম্পানি যদি নিজের ১০%-৩০% টাকা খরচ করে ফেলে,তখন তার আর নিজের টাকা থাকে না,ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়, ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়,কম্পানি তার বিল প্রেমেন্ট করতে পারে না।
১১. সেই কারনে কোম্পানি চেষ্টা করে কর্মী সংখ্যা কমাতে।
১২. মানুষের আয় কমে গেলে,অনেক লোক বেকার হলে,ভয় পেয়ে যাদের টাকা আছে তারাও খরচ করা কমিয়ে দেয়।
১৩.যেহেতু জিনিসের চাহিদা কমে যায়।বিক্রি কমে যায়,তাই আরও অনেকে বেকার হয়। ১৪.আমরা যে ইন্সুরেন্স করি তারাও সেই টাকা ইনভেষ্ট করে। সেই ইন্সুরেন্স কোম্পানিও আবার ইন্সুরেন্স করায়।এখন সেই কোম্পানি যে কোম্পানিতে ইন্সুরেন্স করিয়েছে, তাদেরই অবস্থা যদি খারাপ হয় ডমিনো এফেক্ট হয়।এক সাথে সব ভেঙে পড়ে-যা এখন হয়েছে।
১৫. আজকাল পশ্চিমী জিনিস অনেক আধুনিক,তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না,একটা গাড়ি কিনলে ১০-২০বছর চলে,রাস্তাও ভালো।তাই গাড়ির চাহিদা সেই হারে বাড়ছে না।
১৬. লোকের টাকা থাকলে গাড়ি কিনবে বা বাড়ি কিনবে!যখন মানুষ ভয় পায়, তখন খরচ করা কমিয়ে দেয়,বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়,নতুন গাড়ির বিক্রিও কমে যায়-যা এখন হয়েছে।
জোর করে কতদিন চাহিদা বাড়ানো সম্ভব?
১৮. এক মাত্র চাহিদা বেড়েছে মুদির দোকানের জিনিসের,কারণ লোক বাড়ছে, কিন্তু কৃষি জমি কমছে।
১৯. আমরা দিনের পর দিন বড়োলোক হতে চাই,যে ১ লাখ আয় করছে সে এখন ২ লাখ আয় করতে চায়।
২০. কয়েক দিন পর সব জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, মুদ্রাস্ফিতি বাড়বে কারন বাজারে অনেক টাকা আসছে।
২১. চারিদিকে হাহাকার বাড়বে। সর্বহারারা ক্ষেপে যাবে,গৃহ যুদ্ধ বাড়বে।
২২. ১৯২৮-১৯৪৫---ইতিহাস পড়ুন।কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো।
২৩. কাজেই এই অবস্থার পরিণতি হল ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার’ বা নতুন রাজনৈতীক ব্যবস্থা-যেমন সোসাল ক্যাপিটালিজম।
২৪. ভারতের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন। কারণ জ্বালানি আমদানি করতে হয়। সোনা আমদানি করতে হয়র উইপেন আমদানি করতে হয়।কিন্তু রপ্তানি করে কেবল জামাকাপড়, চা,বিভিন্ন যোগ্যতা সম্পন্ন শ্রমিক ইত্যাদি।
২৫. ভারতের সেই অর্থে কোন পেটেন্ট নেই,একটা ট্যাবলেট বানালেও পেটেন্টের জন্য টাকা দিতে হয়।
২৬. ভারতের রপ্তানি বানিজ্য কমে যাবে, কিন্তু আমদানি কমবেনা,ফলে বৈদেশিক মুদ্রা যা জমা হয় তা আর থাকবেনা।
২৭. এমন নয় যে ভারতের কম্পিউটার জানা কর্মী ছাড়া বিশ্ব চলবেনা,যেহেতু কর্মী চাহিদা কমে যাবে তাই বিদেশী কর্মীদের প্রথমে ছাঁটাই করবে আর দেশীয় কর্মী ৪০ঘন্টার জায়গায় ৬০ঘন্টা কাজ করবে।
২৮. ভারতীয় ঋণ গ্রহিতারা টাকা শোধ করতে পারবে না,ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
২৯. সরকার টাকা ধার করতে যাবে, কিন্তু বিশ্ব বাজার থেকে টাকা ধার করা সম্ভব হবে না।
৩০. তখন সরকার টাকা ছাপতে শুরু করবে,আর জিনিসের দাম বেড়ে যাবে।
৩১. সরকার তাই করে আমরা যা চাই। কারন ভোটে জিততে হবে। কাজেই মূল দোষী সরকার নয়, আমরাই। অবশ্য আমরা বোকা বোলে আমাদের দেশে সরকার যা করে, আমরা তা মেনে নিই। কারণ আমরা পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝিনা, যে যেটা নিয়ে পরেছি সেটাই বুঝি। কিন্তু আপনারা দেখলেন যে একটা সমস্যার সাথে অন্য সমস্যা কতটা জড়িত।

কি শিখলামঃ লাভে পাপ পাপে মৃত্যু। মানুষের বিশ্বাস যাতে বজায় থাকে সেটা সবার চেষ্টা করা উচিৎ । অতি তাড়াতাড়ি বেড়োনা, ঝড়ে ভেঙে পোড়না। খুব তারাতারি বড়লোক হতে গেলে ভিখারি হওয়ার ভয় থাকে। বিলিতি মদ না খেয়ে চোলাই খান, টাকাটা দেশেই থাকবে।
যোদি আপনারা চান, আমি তা হলে একটা সমাধানও ভেবেছি, এক সময় না হয় তা নিয়ে লিখবো।

http://vinnobasar.blogspot.com/2009/03/new-ad-to-be-continued.html

No comments:

Post a Comment