
পরিবার এরকমই। উদয়-অস্ত টাকা রোজগারের সন্ধানে ঢুঢু করে মরে স্বামী। আর স্ত্রী পটের বিবি সেজে স্নো-পাউডার মেখে করে কিটি পার্টি। তবে মিশেল অতোটাও অবুঝ নয়, তবু সাজ গোজ করতে কোন মেয়ে না ভালোবাসে। আর এই সাজগোজ প্রিতিই মিশেলকে জনপ্রিয় করে তুললো বিশ্বের মানুষের কাছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর প্রথম ইউরোপ সফরে যখন ইতিহাস গড়তে মশগুল, তখন ফ্যাশন দুরস্ত মিশেল ওবামা ছিনিয়ে নিলেন জনপ্রিয়তার মুকুট ৷ বারাক ওবামা শপথ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে । সঙ্গে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা৷ পরনে কিউবান বংশোদ্ভূত মার্কিন ডিজাইনার ইসাবেল টোলেডোর তৈরি সোনালী-হলুদ রঙের আউটফিট৷ গলায় হীরক খচিত চওড়া একখানি হার৷ গ্ল্যামার তো বটেই, একই সঙ্গে আশাবাদ এবং শৈলীর প্রতিক৷ সেদিন টেলিভিশনের পর্দায় কার চোখ এড়িয়েছে সে দৃশ্য ?
বিশ্ব অর্থ মন্দায় মার্কিন রাজনীতি যখন সবদিকে তাল মিলিয়ে চলতে চাইছে, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও তখন বেছে নিয়েছেন গ্যাপ এবং জে ক্রিউ-এর সঙ্গে চিকাগোর নতুন ডিজাইনার মারিও পিন্টো এবং নারসিসো রড্রিগেজ-কে৷ লাল-সাদা-নীল রঙের ঐতিহ্যকে পেছনে ফেলে, ইউরোপ সফরেও সবার মন কেড়েছেন ৪৫ বছর বয়স্কা মিশেল ওবামা৷
প্রথম ইউরোপ সফরের প্রথম দুদিন লন্ডনে অতিবাহিত করেন ওবামা দম্পতি৷ জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ওবামা এক নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সূত্রপাত ঘটান৷ বলেন, শোনা এবং শেখার মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটাতে চান৷ এই মন্ত্র নিয়েই ওবামা দেখা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেডেভ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, এমনকি রানী ইলিজাবেথ দুই-এর সঙ্গে৷ রাজভবনে রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর সময় মিশেল ছাড়িয়ে যান এতো দিনকার সমস্ত রীতিনীতি৷ রাণীও স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে মুগ্ধ করেন মার্কিন ফার্স্ট লেডিকে৷Bildunterschrift: Großansicht des Bildes mit der Bildunterschrift: ফ্রান্সে সারকোজি দম্পতির সঙ্গে ওবামা দম্পতি
লন্ডনে বারাক ও মিশেল দুজনে সংসার পাতেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে৷ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর সময় মিশেলের পরনে ছিল হাল্কা সবুজ রঙের পেন্সিল স্কার্ট, মার্কিন ডিজাইনার জে ক্রিউ-এর তৈরি ঘিয়ে রঙের কার্ডিগান এবং ঐতিহ্যের প্রতিক সাদা মুক্তোর সেট৷ সকালের সূর্যকিরণ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা মিশেল ওবামাকে আরো ব্যক্তিত্যময়ী করে তোলে৷
ওমাবা আর ব্রাউন যখন রাজনীতি-অর্থনীতির কচকচিতে ব্যস্ত, তখন মিশেল আর বৃটেনের ফার্স্ট লেডি সারাহ ব্রাউন চলে যান একটি ক্যান্সার সেন্টার পরিদর্শনে৷ সেখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সামনে মার্কিন ফার্স্ট লেডি নয়, নিজেকে শুধুমাত্র মিশেল বলেই পরিচয় করান মিশেল ওবামা৷ আর এভাবেই সারাহ-র সঙ্গে স্পঞ্জ কেক আর চকোলেট ফ্রস্টিং খেতে খেতে সাধারণ মানুষের অত্যন্ত কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন মিশেল৷
৩-রা এপ্রিল ফরাসী শহর স্ট্রাসবুর্গে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডন ত্যাগ করেন ওবামা দম্পতি৷ আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে প্রেসিডেন্টশিয়াল হেলিকপ্টারের জায়গায়, ওবামার বুটেলপ্রুফ লিমোজিন বিস্ট-এর চড়তে হয় তাদের৷ প্লেনের দরজা বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যুগলে হাত নাড়েন বারাক-মিশেল ওবামা৷
ফ্রান্সে ওবামা দম্পতিকে স্বাগত জানান ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এরপর ন্যাটোর ৬০ বছর পূর্তি, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান বিষয়ক নতুন নীতি এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন৷ আর মিশেল ওবামা সঙ্গ নেন মডেল-কাম-সঙ্গীত শিল্পী কার্লা ব্রুনি-সারকোজির৷ ব্যাস্, মিশেল হয়ে ওঠেন ফরাসী ফটোগ্রাফারদেরও নয়নের মনি৷
দুই মেয়ে মালিয়া ও সাশার মাম-ইন-চিফ মিশেল ওবামাকে তাই ইতিমধ্যেই অ্যামেরিকান ফ্যাশন জগতের অ্যামবাসেডর বা প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী৷ এমনকি বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভ্যানিটি ফেয়ারও মিশেলকে বিশ্বের ১০ জন সেরা পোষাকধারীর অন্যতম বলে উল্লেখ করেছে, জানিয়েছেন অন্যতম মার্কিন ডিজাইনার ওস্কার ডে লা রেন্টে৷
No comments:
Post a Comment