
মন্দার দাওয়াই খুঁজতে অর্থ দপ্তরের সাথে এবার হয়তো স্বাস্থ্য দপ্তরকেও হাত মেলাতে হবে। পরিবার কল্যান মন্ত্রক আর স্লোগান দেবেনা ‘হাম দো হামারে দো’। বরং পরিবার থেকে হয়তো এবার স্লোগান উঠবে “কাম দো ওর চেয়ন সে ‘কাম’ করনে দো”। জনসমুদ্রের এই দেশে বসে কথাটা বেখাপ্পা লাগতে পারে কিন্তু মার্কিন স্বাস্থ্য দপ্তরের কপালে চিন্তার ভাজ। আর্থিক মন্দার কবলে থাকা বিগত নয় মাস সে দেশের জনসংখ্যায় ব্যাপক হ্রাসের সৃষ্টি করেছে। সমাজ বিঞ্জানীরা এর কারন হিসেবে অর্থনৈতিক মন্দাকেই দায়ী করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের মধ্যে হতাশা প্রবনতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার কারনে মানুষ যৌনতা বিমুখ হয়ে পড়ছে। মার্কিন শেয়ার বাজারের ধস, চাকরির বাজারে ব্যাপক মন্দা, মাইনে ২০% হ্রাস, এই সব ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতাময় কারনগুলি বিগত নয় মাস মানুষকে হতাশা প্রবন করে তুলেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এয়াসোশিয়েসান এক সমিক্ষায় লক্ষ করেছেন অর্থনৈতীক মন্দার কারনে মার্কিন নাগরিকদের ৮০% হতাশায় আক্রান্ত। পরিবারের আয় যেখানে ক্রম হ্রাসমান সেখানে এখনই পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথা মার্কিন দম্পতিরা চিন্তা করতে পারছেন না।
এই কথারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেলো ফ্লোরিডা নিবাসী মার্ক দম্পতির কন্ঠ থেকে। টনি মার্ক মাত্র দু বছর হল বিয়ে করেছেন। মার্ক শেয়ার বাজারের দালাল। সুখি দাম্পত্য জীবনের স্বপ্নে বিয়ে করে ছিলেন। অর্থনৈতীক মন্দা জীবনে মিশিয়ে দিলো হতাসা। একটা বাচ্চার আগমনে পরিবারটা কোলাহল মুখর আনন্দময় হয়ে উঠুক সব নব দম্পতির মতো মার্কও চান। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।‘ আমি জানি বাচ্চার জন্য কতোটা খরচ বাড়তে পারে, এই মুহুর্তে এই খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও আমি ও আমার স্ত্রী একটা বাচ্চার স্বপ্ন নিয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম”। কথাগুলি বলেন ৩১ বছরের টনি মার্ক। শেয়ার বাজারের অবস্থা এখন শোচনীয়। টনি কর্মহীন, উপরুন্তু তার স্ত্রী’র দিদিকেও তাদের সাহায্য করতে হচ্ছে। টনির শ্যালিকা বাড়ি বন্ধক রেখে কিছু টাকা ধার করেছিলেন, সেই টাকার ই.এম.আই দিতে দিতে তার শোচনীয় অবস্থা।
বাচ্চার জন্য মার্কিন মুলুকে খরচা কতো?
একটা বাচ্চার তত্বাবধানের জন্য মার্কিন দেশে বছরে খরচ হয় ১০৯৩০ ডলার থেকে ১২০৩০ ডলার। মানে ভারতীয় টাকায় ৫৩৫৫৭০ টাকা থেকে ৫৪৯৪৭০ টাকা। অর্থনৈতীক মন্দার বাজারে এই টাকা জোগাড় করা মার্কিন মধ্যবিত্ত দম্পতিদের কাছে অকল্পনিয়। এই পরিস্থিতিতে উচ্চবিত্তরাও এতো টাকা খরচ থেকে একটু সমঝে চলছেন।গর্ভকালিন সময়ের খরচ ও সে দেশে কম নয়। প্রায় ১২০০০ মার্কিন ডলার। ভারতীয় টাকায় যা প্রায় ৫৪৪০০০ টাকা। গর্ভপাত করতেও ডাক্তার কে দিতে হয় মোটা টাকা। চিকিৎসার জন্য মার্কিন দেশে খরচের পরিমান অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ৩৮ সপ্তাহের গর্ভকালিন সময়ে গর্ভবতীর পরিচর্যার জন্য ডাক্তারের ফি, প্যাথলজির খরচ, ওষুধের বিল’ও কম নয়।
এই সব সাত পাঁচ সমস্যা মার্কিন দেশের শিশু জন্মের হার অস্বাভাবিক ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। ১৯৭০ এর অর্থনৈতীক মন্দা, যা ১৯৭৩ এর নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ এর মার্চ পযন্ত চরম ভাবে মার্কিন সমাজে প্রভাব ফেলে ছিলো। ১৯৭৩ এর আগে শিশু জন্মের হার ছিলো ৬৮.৮%।১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত এটা নেমে ৬৫ শতাংশের ও কম সংখ্যায় এসে দাঁড়ায়। ১৯৭৬ এ যখন অর্থনৈতীক মন্দা কেটে যায় তখন আবার স্বাভাবিক হয় শিশু জন্মের হার।এরপর ৮০ দশকে শিশু জন্মের হার ছিলো স্বাভাবিক। গড়ে প্রায় ৬৮.৪%। ১৯৮০ সালে আবার একটি আর্থিক মন্দা আসে। ১৯৮০ জানুয়ারি থেকে জুলাই আবার ১৯৮১ এর জুলাই থেকে ১৯৮২ নভেম্বর পর্যন্ত। তখন শিশু জন্মের হার আবার হ্রাস হতে থাকে। ১৯৮৪ পর্যন্ত এটা ছিলো ৬৫.৫%। এরপর আবার বাড়তে থকে জ়নসংখ্যা। ১৯৯০ সালে শিশু জন্মের হারে সর্বাধিক বৃদ্ধি ঘটে যায়। এই সময় মার্কিন দেশে শিশু জন্মের হার ছিলো ৭০.৯%। এরপর আবার কমতে থকে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত যা ছিলো ৬৩.৬ শতাংশ। ২০০১ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে অর্থনৈতীক মন্দার ফলে শিশু জন্মের হার সামান্য কমলেও বিশেষ প্রভাব পড়েনি। ২০০১ এর মার্চ থেকে ২০০১ এর নভেম্বর পর্যন্ত থাকা এই অর্থনৈতীক মান্দার বাজারে শিশু জন্মের হার ছিলো ৬৪.৮ শতাংশ। ২০০২ সালে আবার এটি স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় ৬৫.৩ শতাংশে।
মা ষষ্টি আর মা লক্ষির এই সহাবস্থানের কথা এর আগের কোনও সমিক্ষায় ধরা পরেছে কি না তার হিসেব নেই। অর্থনৈতীক মন্দা অর্থনিতীর গলদ গুলোর সাথে ধর্মের এই গুহ্য তত্বটিকেও উদঘাটন করতে পারলো সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
No comments:
Post a Comment